রোজার নিয়ত, রমজানের ফজিলত, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

রোজার নিয়ত। রমজানের ফজিলত। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, পঞ্চস্তম্ভ। চলছে রমজান মাস। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এই মাসে অত্যন্ত পবিত্র।

এই সময় বেশ কিছু আচার-রীতি পালন করেন তাঁরা। ইসলাম ধর্ম দাঁড়িয়ে আছে পাঁচটি পিলার বা স্তম্ভের ওপর ভর করে।

এই পিলারগুলি আসলে হল মুসলিমদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। এই কর্তব্যগুলিই ধরে রেখেছে ইসলাম ধর্মকে। জেনে নিন কী এই পাঁচ স্তম্ভ।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

কোরআনের পিকচার

Ads by Google

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভ আছে। স্তম্ভগুলো হল :-

শাহাদাহ্‌:

শাহাদাহ্ একটি মুসলিম বিশ্বাস। আরবিতে এর অর্থ “সাক্ষ্য দেয়া”। ইসলামে শাহাদাহ্‌ (বা শাহাদাত) বলতে আল্লাহ্‌র একত্ব ও মুহাম্মদ(সঃ) যে তার শেষ নবী তার শপথ নেয়াকে বোঝায়।

শাহাদাহ্‌ আবৃত্তি করাকে সুন্নী মুসলমানেরা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি মনে করেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য কিছু নেই, এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বার্তাবাহক|

নামাজ:

নামায, নামাজ বা সালাত হল ইসলাম ধর্মের প্রধান উপাসনাকর্ম। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত (নির্দিষ্ট নামাযের নির্দিষ্ট সময়) নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক বা ফরজ।

Ads by Google

নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। শাহাদাহ্‌ বা বিশ্বাসের পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।

নামায শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত এবং বাংলা ভাষায় পরিগৃহীত একটি শব্দ যা আরবি ভাষার সালাত শব্দের প্রতিশব্দ।

Advertisements

বাংলা ভাষায় ‘সালাত’-এর পরিবর্তে সচরাচর ‘নামাজ’ শব্দটিই ব্যবহৃত হয়। ফার্সি, উর্দু, হিন্দি, তুর্কী এবং বাংলা ভাষায় একে নামায (ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত) বলা হয়। কিন্তু এর মূল আরবি নাম সালাত (একবচন) বা সালাহ্‌ (বহুবচন)।

“সালাত” -এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ: ‘শরী‘আত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে ‘সালাত’ বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়’।

Ads by Google

রমজানের ফজিলত ও রোজা

রোজার নিয়ত  

হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল তোমার পক্ষ থেকে পবিত্র রমজানের নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। উচ্চারণ : বিসাওমি গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রামাদান।

রোযা বা রোজা (ফার্সি রুজ়ে), সাউম (আরবি স্বাউম্‌), বা সিয়াম ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়।

সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোযা।

ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি সবল মুসলমানের জন্য রমযান মাসের প্রতি দিন রোজা রাখা ফরজ (ফ়ার্দ্ব্‌) যার অর্থ অবশ্য পালনীয়।

Ads by Google

রোযার উৎপত্তি:

রোজা শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘পানাহার বা বিরত থাকা’। আর আরবিতে এর নাম সাওম বা সিয়াম।

যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা।

রোজার প্রকারভেদ : রোজা পাঁচ প্রকার।

  1. ফরজ রোজা: যা আবার চার প্রকার-
    1. 1. রমজান মাসের রোজা।
    1. 2. কোন কারণ বশত রমজানের রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে তার কাযা আদায়ে রোজা।
    1. 3. শরীয়তে স্বীকৃত কারণ ব্যতিত রমজানের রোজা ছেড়ে দিলে কাফ্ফারা হিসেবে ৬০টি রোজা রাখা।
    1. 4. রোজার মান্নত করলে তা আদায় করা।
  2. ওয়াজিব রোজা: নফল রোজা রেখে ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে তা আদায় করা ওয়াজিব।
  3. সুন্নত রোজা: মহরম মাসের নয় এবং দশ তারিখে রোজা রাখা।
  4. মোস্তাহাব রোজা: প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, এবং ১৫ তারিখে, প্রতি সাপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে, কোন কোন ইমামের মতে শাওয়াল মাসে পৃথক পৃথক প্রতি সপ্তাহে দুটো করে ছয়টি রোজা রাখা মোস্তাহাব। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে এক সাথে হোক কিংবা পৃথক পৃথক হোক শাওয়ালের ছয়টি রোজা মুস্তাহাব।
  5. নফল রোজা: মোস্তাহাব আর নফল খুব কাছাকাছির ইবাদত। সহজ অর্থে নফল হলো যা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত নয় এমন ইবাদত পূণ্যের নিয়তে করা। রোজার ক্ষেত্রেও তাই।

রোযার ইতিহাস

কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে,
“হে যারা ঈমান এনেছ তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা তাক্ওয়া অবলম্বন করতে পার”। (সূরা বাকারা: ১৮৩)

Ads by Google

হযরত আদম যখন নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার পর তাওবাহ করেছিলেন তখন ৩০ দিন পর্যন্ত তাঁর তাওবাহ কবুল হয়নি। ৩০ দিন পর তাঁর তাওবাহ কবুল হয়। তারপর তাঁর সন্তানদের উপরে ৩০টি রোযা ফরয করে দেয়া হয়।

নূহ (আ.)-এর যুগেও রোজা ছিল। কারণ, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন:
হযরত নূহ (আ.) ১ লা শাওয়াল ও ১০ জিলহজ ছাড়া সারা বছর রোযা রাখতেন।
— ইবনে মাজাহ ১৭১৪ (সনদ দুর্বল)

হযরত ইবরাহীমের যুগে ৩০টি রোজা ছিল বলে কেউ কেউ লিখেছেন। হযরত দাউদ (আ.) এর যুগেও রোযার প্রচলন ছিল।

হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় রোযা হযরত দাউদ (আ.)-এর রোযা। তিনি একদিন রোযা রাখতেন এবং একদিন বিনা রোযায় থা

Ads by Google

রোজার উদ্দেশ্য:

রোজা রাখার উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা, পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নিজেদের কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরহেজগারি বা তাকওয়া বৃদ্ধি করা।

কুরআনে বলা হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো”। — সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩

আরও বলা হয়েছে,
“রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।

সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।

Ads by Google

আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।” — সূরা বাকারা: ১৮৫

‘তাকওয়া’ শব্দটির মূল অর্থ ‘রক্ষা করা।’ এর অনুবাদ করা হয়েছে নানাভাবে। যেমন পরহেজগারি, আল্লাহর ভয়, দ্বীনদারি, সৎ কর্মশীলতা, সতর্কতা প্রভৃতি। রোজা ঢালের মতো কাজ করে, যা গোনাহের হাত থেকে বাঁচায়।

রোজার ফজিলত :

রমজানের একটি বিশেষ ফজিলত বা মাহাত্ম হচ্ছে, এই পবিত্র রমজান মাসে আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। রমজান মাসের রোজা মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়,মানুষের কুপ্রবৃত্তি ধুয়ে মুছে দেয় এবং আত্মাকে দহন করে ঈমানের শাখা প্রশাখা সঞ্জিবীত করে।

সর্বোপরি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এই মর্মে মহানবী (সা) ইরশাদ করেছেন, “রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। একটি হলো তার ইফতারের সময়, আর অপরটি হলো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।” — (বুখারী ও মুসলিম)

Ads by Google

রোজার শর্ত:

রোজার কিছু মৌলিক আচার আছে। যা ফরজ বলে চিহ্নিত। সুস্থ-সবল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে।

কিন্তু শারীরিক অসমর্থতার কারণে সে এ দায়িত্ব থেকে আপাতভাবে মুক্তি পেতে পারে।

এর প্রতিবিধানে রয়েছে কাজা ও কাফফারার বিধান। নিচে রোজার ফরজ ও শর্তগুলো দেওয়া হলো-

রোজার ৩ ফরজ :

  1. নিয়ত করা
  2. সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা
  3. যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা।
  4. রোজা রাখার ৪ শর্ত :
  5. মুসলিম হওয়া
  6. বালেগ হওয়া
  7. অক্ষম না হওয়া
  8. ঋতুস্রাব থেকে বিরত থাকা নারী।

রোজা ভঙ্গ হলে :

বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে তাকে অবশ্যই কাজা-কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব।

Ads by Google

যতটি রোজা ভঙ্গ হবে, ততটি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট। কাফফারা আদায় করার তিনটি বিধান রয়েছে।

  1. একটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। কাফফারা ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজার মাঝে কোনো একটি ভঙ্গ হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
  2. যদি কারও জন্য ৬০টি রোজা পালন সম্ভব না হয় তবে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খাওয়াতে হবে। কেউ অসুস্থতাজনিত কারণে রোজা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন ফকির, মিসকিন, গরিব বা অসহায়কে প্রতিদিন দুই বেলা করে পেটভরে খাওয়াতে হবে।
  3. গোলাম বা দাসী আজাদ করে দিতে হবে।
    যেসব কারণে রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করা যাবে কিন্তু পরে কাজা করতে হয় তা হচ্ছে
  4. মুসাফির অবস্থায়
  5. রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধির বেশি আশঙ্কা থাকলে
  6. মাতৃগর্ভে সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে
  7. এমন ক্ষুধা বা তৃষ্ণা হয়, যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে
  8. শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে
  9. কোনো রোজাদারকে সাপে দংশন করলে।
  10. মহিলাদের মাসিক হায়েজ-নেফাসকালীন রোজা ভঙ্গ করা যায়
  1. যেসব কারণে শুধু কাজা আদায় করতে হয়
  2. স্ত্রীকে চুম্বন বা স্পর্শ করার কারণে যদি বীর্যপাত হয়।
  3. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে
  4. পাথরের কণা, লোহার টুকরা, ফলের বিচি গিলে ফেললে
  5. ডুশ গ্রহণ করলে।
  6. বিন্দু পরিমান কোন খাবার খেলে তবে অনিচ্ছাকৃত ভাবে বা মনের ভুলে খেলেও রোজা ভাংবে না তবে মনে আসা মাত্রই খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
  7. নাকে বা কানে ওষুধ দিলে (যদি তা পেটে পৌঁছে)।
  8. মাথার ক্ষতস্থানে ওষুধ দেওয়ার পর তা যদি মস্তিষ্কে বা পেটে পৌঁছে।
  9. যোনিপথ ব্যতীত অন্য কোনোভাবে সহবাস করার ফলে বীর্য নির্গত হলে।
  10. স্ত্রী লোকের যোনিপথে ওষুধ দিলে।

যাকাত:

যাকাত: “যা পরিশুদ্ধ করে”, ‎”সম্পদের যাকাত” হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়।

সাধারণত নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি হিজরি ১ বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়।

পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে “যাকাত” শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার। নামাজের পরে সবচেয়ে বেশি বার এটি উল্লেখ করা হয়েছে।

Ads by Google

যাকাতের শর্তসমূহ : স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে তার উপর যাকাত ফরয হয়ে থাকে। যেমন:

১. সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা
সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য সম্পদের মালিকানা সুনির্দিষ্ট হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ সম্পদ, মালিকের অধিকারে থাকা, সম্পদের উপর অন্যের অধিকার বা মালিকানা না থাকা এবং নিজের ইচ্ছামতো সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার করার পূর্ণ অধিকার থাকা।

যেসকল সম্পদের মালিকানা সুসস্পষ্ট নয়, সেসকল সম্পদের কোনো যাকাত নেই, যেমন: সরকারি মালিকানাধীন সম্পদ। অনুরূপভাবে জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ওয়ক্‌ফকৃত সম্পদের উপরেও যাকাত ধার্য হবে না। তবে ওয়াক্‌ফ যদি কোনো ব্যক্তি বা গোত্রের জন্য হয়, তবে তার উপর যাকাত দিতে হবে।

২. সম্পদ উৎপাদনক্ষম হওয়া
যাকাতের জন্য সম্পদকে অবশ্যই উৎপাদনক্ষম, প্রবৃদ্ধিশীল হতে হবে, অর্থাৎ সম্পদ বৃদ্ধি পাবার যোগ্যতাই যথেষ্ট। যেমন: গরু, মহিষ, ব্যবসায়ের মাল, নগদ অর্থ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ক্রীত যন্ত্রপাতি ইত্যাদি মালামাল বর্ধনশীল।

Ads by Google

অর্থাৎ যেসকল মালামাল নিজের প্রবৃদ্ধি সাধনে সক্ষম নয়, সেসবের উপর যাকাত ধার্য হবে না, যেমন: ব্যক্তিগত ব্যবহারের মালামাল, চলাচলের বাহন ইত্যাদি।

৩. নিসাব পরিমাণ সম্পদ
যাকাত ফরয হওয়ার তৃতীয় শর্ত হচ্ছে শরীয়ত নির্ধারিত সীমাতিরিক্ত সম্পদ থাকা। সাধারণ ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা উভয়টি মিলে ৫২.৫ তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদ থাকলে সে সম্পদের যাকাত দিতে হয়। পশুর ক্ষেত্রে এই পরিমাণ বিভিন্ন।

৪. মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ থাকা
সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মিটিয়ে যে সম্পদ উদ্ধৃত থাকবে, শুধুমাত্র তার উপরই যাকাত ফরয হবে। এপ্রসঙ্গে আল-কুরআনে উল্লেখ রয়েছে:

লোকজন আপনার নিকট (মুহাম্মদের [স.] নিকট) জানতে চায়, তারা আল্লাহর পথে কী ব্যয় করবে? বলুন, যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত। আল্লাহ এভাবেই তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান বলে দেন।
মুহাম্মদের [স.] সহচর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস [রা.] বলেছেন, “ অতিরিক্ত বলতে পরিবারের ব্যয় বহনের পর যা অতিরিক্ত বা অবশিষ্ট থাকে তাকে বুঝায়।”
জনাব ইউসুফ আল কারযাভী’র মতে স্ত্রী, পুত্র, পরিজন, ও পিতামাতা এবং নিকটাত্মীয়দের ভরণ-পোষণও মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত।

Ads by Google

৫. ঋণমুক্ততা :
নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলেও ব্যক্তির ঋণমুক্ততা, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম শর্ত। যদি সম্পদের মালিক এত পরিমাণ ঋণগ্রস্থ হন যা, নিসাব পরিমাণ সম্পদও মিটাতে অক্ষম বা নিসাব পরিমাণ সম্পদ তার চেয়ে কম হয়, তার উপর যাকাত ফরয হবে না।

ঋণ পরিশোধের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই কেবল যাকাত ওয়াজিব হয়। তবে এক্ষেত্রে দ্বিতীয় মতটি হলো: যে ঋণ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয় সে ঋণের ক্ষেত্রে যেবছর যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হয়, সেবছর সে পরিমাণ ঋণ বাদ দিয়ে বাকিটুকুর উপর যাকাত দিতে হয়।

কিন্তু ঋণ বাবদ যাকাত অব্যাহতি নেয়ার পর অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় সে সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে।

৬. সম্পদ এক বছর আয়ত্তাধীন থাকা :
নিসাব পরিমাণ স্বীয় সম্পদ ১ বছর নিজ আয়ত্তাধীন থাকা যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পূর্বশর্ত।

Ads by Google

তবে কৃষিজাত ফসল, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির যাকাত (উশর) প্রতিবার ফসল তোলার সময়ই দিতে হবে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ও কোম্পানীর ক্ষেত্রে বছর শেষে উদ্বর্তপত্রে (Balance Sheet) বর্ণিত সম্পদ ও দায়-দেনা অনুসারে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারিত হবে।

বিশেষ ক্ষেত্রে যাকাত :

  1. অপ্রাপ্তবয়স্ক ও পাগলের যাকাত: সম্পদের মালিক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিংবা পাগল হলে, তার যাকাত তার আইনানুগ অভিভাবককে আদায় করতে হবে।
  2. যৌথ মালিকানাধীন সম্পত্তির যাকাত:
    কোনো সম্পদে যৌথ মালিকানা থাকলে সম্পদের প্রত্যেক অংশীদার তাঁর স্ব স্ব অংশের উপরে যাকাত দিবেন, যদি তা নিসাব পরিমাণ হয় বা তার অতিরিক্ত হয়। অর্থাৎ সম্পদের স্বীয় অংশের মূল্য অন্যান্য সম্পদের সাথে যোগ করে হিসাব করে যদি দেখা যায় তা নিসাব পরিমাণ হয়েছে বা অতিক্রম করেছে, তবে যাকাত দিতে হবে।
  3. নির্ধারিত যাকাত: যাকাত নির্ধারিত হওয়াসত্ত্বেয় পরিশোধের আগেই সম্পদের মালিকের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারগণ অথবা তার তত্ত্বাবধায়ক তার সম্পত্তি থেকে প্রথমে যাকাত বাবদ পাওনা ও কোনো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করবেন। এরপর অবশিষ্ট সম্পত্তি, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টিত হবে।
  4. তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে ন্যস্ত সম্পদের যাকাত: মালিকের পক্ষ থেকে নিয়োগকৃত আইনানুগ তত্ত্বাবধায়কের কাছে সম্পত্তি ন্যস্ত থাকলে মালিকের পক্ষে উক্ত তত্ত্বাবধায়ক সে যাকাত পরিশোধ করবেন।
  5. বিদেশস্থ সম্পদের যাকাত: যাকাত ওয়াজিব হবার জন্য সম্পত্তি নিজ দেশে থাকা শর্ত নয়। বরং সম্পত্তি অন্য দেশে থাকলেও তার উপর যাকাত দিতে হবে। তবে উক্ত দেশ ইসলামী রাষ্ট্র হলে এবং দেশের সরকার যাবতীয় সম্পদের উপর যাকাত দিলে তা আর আলাদা করে দিতে হবে না।
    যাকাত বণ্টনের খাতসমূহ:
    পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাওবা যাকাত বন্টনে আটটি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারন করেছেন। এই খাতগুলো সরাসরি কুরআন দ্বারা নির্দ্দিষ্ট, এবং যেহেতু তা আল্লাহ’র নির্দেশ, তাই এর বাইরে যাকাত বণ্টন করলে যাকাত, ইসলামী শরিয়তসম্মত হয় না।
  6. ফকির (যার কিছুই নেই)।
  7. মিসকীন (যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই)।
  8. যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই)।
  9. (অমুসলিমদের) মন জয় করার জন্য।
  10. ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে)।
  11. ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশী
  12. (স্বদেশে ধনী হলেও বিদেশে) আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি।
  13. মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)।

হাদিসমতে, এগুলো ফরয সাদকাহের খাত, এবং নফল সাদকাহ এই আট খাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পরিসর আরো প্রশস্ত। উল্লেখিত খাতসমূহে যাকাত বণ্টন করতে সঠিক পন্থায়। অনেকে যাকাতের অর্থে শাড়ি ক্রয় করে তা বন্টন করে থাকেন।

এভাবেও যাকাত আদায় হয়ে গেলেও এভাবে আসলে প্রকৃতপক্ষে যাকাত গ্রহণকারীর তেমন উপকার হয় না। তাই যাকাত বন্টনের উত্তম পন্থা হলো: যাকাত যাদেরকে প্রদান করা যায়, তাদের একজনকেই বা একটি পরিবারকেই যাকাতের সম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেয়া।

যাকাত গণনার নিয়ম :
ধর্মীয়ভাবে প্রতিজন মুসলমানকে তাঁর যাবতীয় আয়-ব্যয়-সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব সংরক্ষণ করতে হয়। হিসাব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাৎসরিক ভিত্তি একটি মৌলিক ধারণা।

Ads by Google

অর্থাৎ বছরের একটা নির্দিষ্ট দিন থেকে পরবর্তি বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত যাবতীয় আয়-ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখতে হয়। এই ‘দিন’ বাছাই করার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে, কোন মাসে দিন নির্ধারণ করতে হবে।

সাধারণত কেউ কেউ হিসাব সংরক্ষণের সুবিধার্থে হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমের কোনো দিন কিংবা অধিক পূণ্যের আশায় রমজান মাসের কোনো দিন বাছাই করে থাকেন। এই হিসাব সংরক্ষণ হতে হবে যথেষ্ট সূক্ষ্মতার সাথে।

সংরক্ষিত হিসাবের প্রেক্ষিতে ইসলাম ধর্মের নিয়মানুযায়ী নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলে তবেই উক্ত ব্যক্তির উপর যাকাত দেয়া বাধ্যতামূলক (ফরয) হয়, অন্যথায় যাকাত দিতে হয় না।

হজ্জ্ব:

হজ্ব বা হজ্জ বা হজ হইলো ইসলাম ধর্মাবলম্বী অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত বা ধর্মীয় উপাসনা।

Ads by Google

এটি ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ সম্পাদন করা ফরজ বা আবশ্যিক।

আরবি জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ হজের জন্য নির্ধরিত সময়। হজ পালনের জন্য বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরী এবং সন্নিহিত মিনা, আরাফাত, মুযদালিফা প্রভৃতি স্থানে গমন এবং অবস্থান আবশ্যক।

এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাৎসরিক তীর্থযাত্রা। যিনি হজ সম্পাদনের জন্য গমন করেন তাঁকে বলা হয় হাজী।

ইসলামে হজ্জের গুরুত্ব
আবু হোরায়রা বর্ণিত এক হাদিসে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ থেকে এমতাবস্খায় ফিরে আসে যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছে।

Ads by Google

অর্থাৎ জন্মের পর শিশু যেমন নিষ্পাপ থাকে, সেও তদ্রূপই হয়ে যায়।” আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেনঃ “শয়তান আরাফার দিন হতে অধিক লজ্জিত ও অপদস্থ আর কোনো দিন হয় না।

কেননা ওই দিন আল্লাহতায়ালা স্বীয় বান্দার প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করেন ও অসংখ্য কবিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেন।” তিনি আরো বলেছেনঃ “একটি বিশুদ্ধ ও মকবুল হজ সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর চেয়ে উত্তম। বেহেস্ত ব্যতীত অন্য কোনো বস্তু তার প্রতিদান হতে পারে না।”

হজ্জের অর্থ
ইসলামের বর্ণনা অনুসারে হজ্ব একটি আবশ্যকীয় বা ফরজ উপাসনা। এটি ইসলামের ৫ম স্তম্ভ।

হজ্ব শব্দের আভিধানিক অর্থ “ইচ্ছা” বা “সংকল্প” করা। আচার ও আদব-কায়দার বিবেচনায় হজ্ব হলো বৎসরের নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পোশাকে কয়েকটি স্থানে অবস্থান বা ওকুফ, ক্বাবা শরীফের তাওয়াফ, পশু কোরবানী, নির্দ্দিষ্ট স্থানে পরপর ৩দিন কংকর নিক্ষেপ এবং সাফা-মারওয়া টিলাদ্বয়ের মধ্যে হাঁটা।

Ads by Google

হজ্বের ঐতিহাসিক পটভূমি

কাবাঘরে সর্বপ্রথম হজ আদায় করেন ইসলামের নবী আদম ; তারপর নূহ সহ অন্য ইসলামের অন্যান্য নবী-রাসূল এ দায়িত্ব পালন করেন। ইব্রাহিম (আ:) এর সময় থেকে হজ ফরজ বা আবশ্যকীয় ইবাদত হিসেবে নির্ধারিত করা হয়।

হিজরি সনের ১২তম মাস হলো জিলহজ্জ মাস। ইসলামের বর্ণনা অনুসারে স্রষ্টা ইব্রাহিম কে হজ ফরজ হওয়ার কথা ঘোষণা করার জন্য নির্দেশ দেন।

কোনো কোনো বর্ণনায় আছেঃ এ আদেশের পর ইব্রাহিম আবু কোবাইস পাহাড়ে আরোহণ করে দুই কানে অঙ্গুলি রেখে ডানে-বামে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফিরিয়ে ঘোষণা করেছিলেনঃ “লোক সব, তোমাদের পালনকর্তা নিজের গৃহ নির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের ওপর এই গৃহের হজ ফরজ করেছেন। তোমরা সবাই পালনকর্তার আদেশ পালন করো”।

Ads by Google

এই বর্ণনায় আরো উল্লেখ আছে যে ইব্রাহিম এর ঘোষণা স্রষ্টার পক্ষ থেকে বিশ্বের সবখানে পৌঁছে দেয়া হয়।

হজ্বের বিভিন্ন আচার-কায়দা ইব্রাহিম এর জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিভিন্ন ইসলামিক বর্ণনায় উল্লেখ আছে ইব্রাহিম স্রষ্টার নির্দেশে তাঁর স্ত্রী হাজেরাকে নির্জন মরুভূমিতে রেখে এসেছিলেন।

সেখানে, কাবা শরীফের অদূরে, হাজেরা নবজাত শিশু ইসমাইলকে নিয়ে পানির অভাবে পড়েছিলেন। সাহায্যের জন্য কাউকে না পেয়ে তিনি পানির খোঁজে সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন।

এই ঘটনাকে স্মরন করেই হজের সময় মুসলিমদের জন্য সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে হাঁটার নিয়ম রয়েছে।

Ads by Google

ইসলামিক বর্ণনায় উল্লেখ আছে স্রষ্টা বেহেশত বা স্বর্গ থেকে আদম ও হাওয়া কে যখন পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন, এতে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে উভয়ে আরাফাত ময়দানে এসে মিলিত হন।

এই ঘটনার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজ্বের একটি অংশ হিসেবে মুসলিমরা আরাফাতের ময়দানে এসে উপস্খিত হয়ে স্রষ্টার কাছে কান্নাকাটি করে ইবাদতে মগ্ন হন।

বিদায় হজ্জ

মক্কা বিজয়-এর দ্বিতীয় বছরে ইসলামের নবী মুহম্মাদ তাঁর জীবনের সর্বশেষ হজ্ব পালন করেন। এটি বিদায় হজ্জ নামে মুসলিমদের কাছে পরিচিত।

Ads by Google

এর পূর্ববর্তী বৎসরে তিনি হজ্ব করেননি। মক্কা বিজয়ের পরবর্তী বছরে ইসলামের প্রথম খলিফা আবুবকর এর নেতৃত্বে হজ্ব সম্পাদিত হয়। পরবর্তী বৎসরে মুহম্মাদ হজ্বের নেতৃত্ব দান করেন।

বিদায় হজ্বের মাধ্যমে তিনি মুসলিমদের জন্য আদর্শরূপে হজ্ব পালনের নিয়মাবলী উল্লেখ এবং প্রদর্শন করেন। এই হজ্বের সময় তিনি আরাফাতের ময়দান-এ যে ভাষণ প্রদান করেন তা মুসলিমদের কাছে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

হজ্বের শর্তাদি
হজ্বে গমনের জন্য মুসলমানদের কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আর্থিক এবং শারীরিক সামর্থ্য।

নারীদের জন্য মাহরাম

Ads by Google

ইসলামী সূত্রানুযায়ী আর্থিক এবং শারীরিক সামর্থ্য ছাড়াও নারীদের জন্য তৃতীয় একটি শর্তের উল্লেখ করা হয়, সেটি হলো হজে যাওয়ার জন্য নারীকে স্বীয় স্বামী অথবা মাহরাম (যেসব নিকট আত্মীয়ের সাথে ইসলামে বিয়ের অনুমতি নেই।

যেমন পিতা, ভ্রাতা, পুত্র, চাচা, মামা প্রমুখ ) পুরুষকে সঙ্গে নিতে হয়। যাদের মাহরাম নেই তাদের হজে যাওয়ার ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নেই। মাহরাম ব্যতীত হজের জন্য নারীদের সৌদি আরবের ভিসা প্রদান করা হয় না।

বলা হয়, যদি মাহরাম ব্যতীত হজ করতে যায় তাহলে হজ হয়ে যাবে, কিন্তু মাহরাম ব্যতীত সফরের জন্য গুনাহগার বা পাপী হবে।

হজের রীতি-নীতি
ইহরাম

Ads by Google

হজ্বকালীন সার্বিক অবস্থাকে বলা হয় ইহরাম যার প্রধান চিহ্ন হলো দুই খণ্ড সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরিধান। ইহরাম-এর নির্দ্দিষ্ট স্থানকে বলা হয় মিকাত। হজ্বের সময় তালবিয়াহ নামক দোয়া পাঠ করা হয়। এটি নিম্নরূপ:

তালবিয়াহ হলো-‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইকা। ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা-শারীকা লাকা।

এর অর্থ হলো, হে আল্লাহ, আমি হাজির আছি, আমি হাজির আছি। আপনার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির আছি। নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সমগ্র বিশ্বজাহান আপনার। আপনার কোনো শরীক নেই।

তাওয়াফ

Ads by Google

ক্বাবা শরীফের দক্ষিণ-পূর্ব থেকে শুরু করে একাদিক্রমে ৭বার ক্বাবা শরীফ প্রদক্ষিণ করাকে ইসলামে ‌‌‌তাওয়াফ বলা হয়ে থাকে। মুসলমানদের জন্য এটি হজের একটি অপরিহার্য অঙ্গ।

বিভিন্ন প্রকার হজ্ব

হজ্জ সম্পাদনের রীতি-নীতি অভিন্ন হলেও মক্কা নগরীতে গমনের সময় এবং হজ্জ ও উমরাহ পালনের পরম্পরার ভিন্নতার জন্য হজ্জ তিন প্রকার হতে পারে। এগুলো হলো হজ্জে এফরাদ, হজ্জে কেরান এবং হজ্জে তামাত্তু। হজ্জ তিন প্রকার—তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ।

হজে তামাত্তু হজের মাসসমূহে (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) উমরাহর নিয়তে ইহরাম করে, উমরাহ পালন করে, পরে হজের নিয়ত করে হজ পালন করাকে ‘হজে তামাত্ত’ু বলে।

Ads by Google

হজে কিরান হজের মাসসমূহে একই সঙ্গে হজ ও উমরাহ পালনের নিয়তে ইহরাম করে উমরাহ ও হজ করাকে ‘হজে কিরান’ বলে।

হজে ইফরাদ শুধু হজ পালনের উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে হজ সম্পাদনকে ‘হজে ইফরাদ’ বলে।

গ্রন্থসূত্র উইকিপিডিয়া

Ads by Google